তিতির পালনের পদ্ধতি ও রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

তিতির নামটির সঙ্গে অনেকেই পরিচিত। পৃথিবীতে পোল্ট্রির যে ১১টি জাত আছে তাঁর মধ্যে তিতির একটি জাত। এটি আমাদের গ্রামবাংলায় চাইনীজ মুরগী নামেও পরিচিত ।

তিতির বর্তমানে বিলুপ্তির পথে । এটি সাধারণত সৌখিন লোকেরাই চাষ করে থাকে । তবে বর্তমানে এটি বানিজ্যিকভাবে পালন করা শুরু হয়েছে। এটিকে হাঁস মুরগীর সাথে একত্রে পালন করা যায়। তিতির পালনে অনেকেই বর্তমানে সাবলম্বী হচ্ছে । এই তিতির মুরগী দেখতে অনেক সুন্দর এবং বড় । আপনি ইচ্ছা করলে আপনার বাড়িতে পালন করতে পারেন ।

তিতির পালনে কি ধরণের খাঁচা বা ঘর বাছাই করবেন?

বাড়িতে তিতির পালন করার জন্য আপনাকে প্রথমে উপযুক্ত ঘর তৈরি করতে হবে । এক্ষেত্রে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে । এক্ষেত্রে আপনি তিতির ঘর বানানোর জন্য বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন । ঘরের বেড়া বাঁশের দরজা বা কাঠের তক্তা দিয়ে তৈরি করতে হবে ।

এছাড়া মাটির দেয়ালও তৈরি করা যাবে । বেড়া বা দেওয়ালে আলো বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকতে হবে । তিতির খোলামেলা পরিবেশেও পালন করা যায় । কিংবা আপনি অর্ধ আবদ্ধ অবস্থায় পালন করতে পারেন ।

তিতিরের জাত বাছাই করা

পৃথিবীতে বর্তমানে তিতিরের ৩টি মাত্র জাত রয়েছে । তাঁর মধ্যে রয়েছে পার্ল ভ্যারাইটি, লেভেনডার ভ্যারাইটি, হোয়াইট ভ্যারাইটি । তবে আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মিল রেখে পার্ল ভ্যারাইটি জাতটি পালন করা সহজ ।

তিতির পালন করার সঠিক সময়

বাড়িতে তিতির পালন করার জন্য তেমন কোন নির্দিষ্ট সময় ধরাবাধা নেই । আপনি ইচ্ছা করলে বছরের যেকোন সময়ে তিতির পালন করতে পারেন । তবে মার্চ মাস থেকে অক্টোবর মাসে তিতির প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয় । এসময় তিতিরের পালন করা উত্তম ।

তিতির পালন ও সঠিক যত্ন

আমাদের দেশের আবহাওয়ার সাথে মিল রেখে যে পার্ল ভ্যারাইটি জাতটি পালন করা হয় সেটি পালন করা অত্যন্ত সহজ । তিতিরের ডিম দেশী মুরগীর মাধ্যমে ফুটানো যায় । যে তিতির পাখি পাওয়া যায় সেটি পার্ল বা ধুসর বর্ণের । তিতির কে মূলত তিন অবস্থায় পালন করা যায় ।

১। মুক্ত অবস্থায়, ২। অর্ধ মুক্ত অবস্থায়, ৩। বন্ধ অবস্থায় । বাড়িতে হাঁস মুরগী এর সাথে তিতির পালন করা যায় ।।

তিতির পালনের পদ্ধতি/কৌশল

বাড়িতে তিতির পালন করা অনেক সহজ । তবে এদের পালনে কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে । তিতিরের বাচ্চা সাধারণত মুরগীর বাচ্চার চেয়ে একটু বেশি ঠান্ডায় অধিক সংবেদনশীল। তাই তিতিরের বাচ্চাকে প্রথম সপ্তাহে ব্রুডারে একটু বেশী তাপমাত্রায় রাখতে হবে ।

তিতিরের বাচ্চা একটু বড় হলে তিতিরের বাচ্চার জন্য ব্রুডারে তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে হবে। খেয়াল রাখবেন তিতির খুব অলস জাতের পাখি । এরা নিজেদের ডিম খুব বেশী একটা উম দেয় না । কিংবা দেখা যায় যদি উম দেয় তবে দুই একটি বাচ্চা ফুটলে এরা উঠে চলে যায়।

তাই ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর ব্যপারে বেশ সতর্ক হতে হবে । তিতিরের ডিমের রঙ দেখতে অনেক সুন্দর । এর ডিম হালকা বাদামি থেকে ঘন বাদামি হতে পারে । তিতিরের ডিমের গায়ে অনেক সুন্দর ছোট ছোট দাগ দেখা যায় । তিতিরের ডিম সাধারণত প্রচুর শক্ত হয় ।

খাবারের পরিমাণ ও সঠিক নিয়মে খাবার প্রয়োগ

তিতির সাধারণত দেশী মুরগীর মত পালন করতে হবে । দেশি মুরগীর মত তিতিরের খাবার সাধারণত সহজলভ্য । তিতির পালনে আলাদা কোন সুষম খাবারের প্রয়োজন পড়ে না । বর্তমানে বাজারের ব্রয়লার মুরগি ও পশুখাদ্য মিক্সচারই তাদের সাধারণ খাবার । এছাড়াও তিতির সাধারণত বাইরে ঘুরে ঘুরে তাঁর নিজের খাবার নিজেই সংগ্রহ করে নিতে পারে । এছাড়াও তিতির সাধারণত বেশ কিছু খাবার খেয়ে থাকে । যেমন ফেলে দেওয়া এঁটোভাত, তরকারি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গম, ধান, পোকামাকড়, শাক সবজির ফেলে দেওয়া অংশ, ঘাস, লাতাপাতা, কাঁকর, পাথর কুচি ইত্যাদি তিতির কুড়িয়ে খায় । তবে যদি আবদ্ধ অবস্থায় তিতির পালন করা হয় তাহলে তিতিরকে অবশ্যই নিয়মিত খাবার দিতে হবে । খেয়াল রাখতে হবে তিতিরের খাবার যেন কোন অসুবিধা না হয় । তিতির অবশ্য কুড়িয়ে খেতে পছন্দ করে ।

তিতিরের রোগ বালাই ও তাঁর প্রতিকার

বাড়িতে তিতির পালন করার ক্ষেত্রে তিতিরের কয়েকটি রোগ বালাই দেখা যায় । তিতিরের মারাত্নক কয়েকটি রোগ উকুন, গোলকৃমি, রক্তআমাশয়, ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি । এই সকল রোগের ব্যাপারে অবশ্যই টিকা দিতে হবে । তবে যদি কোন তিতির অসুস্থ্য হয় তাহলে উক্ত তিতিরকে যথাশীঘ্রই অন্যান্য তিতির থেকে সরিয়ে নিতে হবে । অসুস্থ্য তিতিরের সংস্পর্শে থাকলে বাকি সুস্থ তিতিরও আক্রান্ত হতে পারে । আর বেশী সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে । এছাড়াও তিতিরের বাচ্চা ডিম ফুটে বের হলে দেখা যায় এদের পা খোঁড়া হওয়ার প্রবনতা অনেক বেশি থাকে । তাই নিয়মিত যত্ন নিতে হবে । তবে তিতির পালনে আলাদা কোনো ভ্যাকসিন বা ওষুধও দিতে হয় না ।

পাখি ও খাচার যত্ন ও পরিচর্যা

তিতির লালন-পালন পদ্ধতি অনেকটা দেশী মুরগির মতই । তিতিরের ঘরের আশেপাশের ঝোপ-জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করতে হবে । এবং তিতিরের ঘরে যেন পরিপূর্ণ আলো বাতাস প্রবেশ করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । তিতিরের পায়খানা ঘরের মেঝেতে যেন লেপ্টে না যায় সেজন্য ঘরের মেঝেতে ধানের তুষ, করাতের গুঁড়া ছিটিয়ে দিতে হবে । এছাড়াও যদি তিতিরের পায়খানা জমতে জমতে শক্ত জমাট বেঁধে গেলে বারবার তা উলট-পালট করে দিতে হবে । নিয়মিত তিতিরের ঘর পরিষ্কার করতে হবে । তিতিরের ঘরে যেন স্যাতসেতে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে । এবং যদি তিতির আবদ্ধ অবস্থায় পালন করা হয় তবে বেশি যত্ন নিতে হবে ।